শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০১:০২ অপরাহ্ন
মো.ইব্রাহীম খলিল মোল্লা ।।
অবুঝ শিশু রিফান (৫) নিখোঁজের ১০ দিন পর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার, থানায় লিখিত অভিযোগের তিনদিন পর একজন গ্রেফতার।গত ১২\০১\২০২১ মেঘনা উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের দুই ভাই এক সাথে মাছ ধরতে গিয়ে বড় ভাই ফিরলেও ফেরা হয়নি অবুঝ শিশু রিফানের।সারাদিন পেড়িয়ে যখন বিকেল, ততক্ষণে রিফানের মা সহ পাড়া প্রতিবেশীরা খুঁজতে বেরিয়ে গেছেন খেলতে বেড়িয়ে না ফেরা রিফানের তালাশে।বাড়ির আশপাশ, ঝোঁপঝাড়, মাঠঘাট যথাসম্ভব সব মসজিদে মসজিদে মাইকিং ও ফেসবুক সহ সামাজিক মাধ্যমে রিফানের ছবি দিয়ে হারানো বিজ্ঞপ্তি রীতিমতো স্থানীয়ভাবে খুব ভাইরাল এই সংবাদ।
ফেসবুকে পোস্ট দেখে প্রবাসী বাবার করুণ আকুতি স্থানীয় প্রশাসন সহ জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তার আদরের সন্তান রিফানকে খুঁজে বের করার জন্য সেদিনই সন্ধ্যায় মেঘনা থানা পুলিশের কাছে নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি।
স্থানীয় জনসাধারণ ও পুলিশের অনবরত প্রচেষ্টায় অবশেষে নিখোঁজের ১০ দিন পর ২২/০১/২০২১ ওমরাকান্দা ব্রিজের নিঁচের নদী থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মিলল অবুঝ রিফানের মরদেহ।
শোকের ছায়া পুরো মেঘনা জুড়ে, এই নৃশংস হত্যাকারীকে গ্রেফতারের দাবি উঠলো সর্বত্র। খবর চলে যায় উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত।
কুমিল্লা জেলার এসপি সাহেবের সরাসরি দিক নির্দেশনায় গত শুক্রবার হতে হোমনা সার্কেল সহ মেঘনা পুলিশ টিম এই চাঞ্চল্যকর মামলা রহস্য উদ্ঘাটনে নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে মুন্সিগন্জের গজারিয়া থানাধীন রসুলপুর এলাকা হতে মূল হোতা শাকিল নামের একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে গ্রেফতারকৃত শাকিলের সরল স্বীকারোক্তি এইরুপ হয় যে, এটা একটা দূর্ঘটনা স্যার, সেদিন আমি বরশি তৈরী করছিলাম মাছ ধরার জন্য আমাদের বাড়ির পাশে গ্যারেজের সামনে বসে আনুমানিক ১১/১১:৩০ ওরা দুজন মেহেদী আর রিফান আমার সামনেই ছিল তখন, আমরা একসাথে গ্রামের দোকান থেকে খাবার এনেও খেয়েছি, ওরা খুব দুষ্টুমি করছিল, ওদেরকে যেতে বললে মেহেদি চলে যায়। কিন্তু রিফান না গিয়ে দুষ্টুমি করলে যে ইট নিচে রেখে মাছ ধরার ছিপ তৈরী করেছিলাম তা ছুড়ে মারি ইটটি, তার মুখে লাগলে সে হঠাৎ পড়ে যায় মাটিতে।
কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তাকে গ্যারেজে ঢুকিয়ে বাড়ি থেকে পানি এনে মুখে ছিটিয়ে দেখি নড়াচড়া করছে না। ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করব, প্রায় আধাঘন্টা অপেক্ষার পর প্রথমে প্লাস্টিকের বস্তা এরপর চটের বস্তায় ঢুকিয়ে গ্যারেজের পিছনে লাকড়ির নিচে লুকিয়ে রাখি। ০৮/০৯ দিন পর যখন একটু গন্ধ বের হতে শুরু হয় তখনই একটা গাড়ি ভাড়া করে বুধবার রাত ০২ টায় ওমরাকান্দা ব্রিজের উপর থেকে ফেলে দিয়ে চট্টগ্রামে চলে যাই। ও আমার চাচাতো ভাই ওকে আমি মারতে চাইনি। ঘটনার পর থেকে স্যার ঘুমাতে পারিনা, খাইতে পারিনা, কি করব বুঝতে পারিনি।
এইভাবেই শেষ হয় নিখোঁজের দশ দিন পর নিহত বস্তাবন্দি শিশু রিফানের রোমহর্ষক চাঞ্চল্যকর মামলার। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একটি সফল অভিযানের মাধ্যমে।
কিছু মন্দের ভিড়েও পুলিশের কিছু ভালো আমাদের নিঃসন্দেহে আশাবাদী করে তোলে আর আমরা আবারো পথ চেয়ে থাকি আরো ভালোর দিকে।দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটনে দৈনিক অন্যদিগন্ত পত্রিকার সহ সম্পাদক হোসেন মনির স্থানীয় জণপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।